মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ১২:২১ অপরাহ্ন

ব্ল্যাক লিস্টেড হওয়ার ভয় আমার ছিল না : ন্যান্সি

বিনোদন প্রতিবেদক : চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় বহু গান উপহার দিয়েছেন, অডিওতেও তাঁর সাফল্য ঈর্ষণীয় । তবে অনেক দিন হলো গানে নিষ্প্রভ নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি । রাজনৈতিক টানাপড়েন, সংগীত এবং নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম ।

প্রায় দুই মাস ধরে সবাই এক প্রকার অস্থিরতার মধ্যে ।
প্রথমে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, এখন বন্যা । এগুলোর সঙ্গে আপনার সম্পৃক্ততা কেমন?
টিএসসিতে যে গণত্রাণ কর্মসূচি হয়েছে, সেখানে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি । আমার মনে হয়েছে, যাদের দুর্গত এলাকায় যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁদেরই যাওয়া উচিত । আমরা ত্রাণ কিংবা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েই পাশে দাঁড়াতে পারি ।
আর আন্দোলনের সময়টা নিয়ে বললে, রাজপথে যারা বলতে পেরেছে, বলেছে । কেউ হয়তো দাবিটা চিৎকার করে বলেছে, কেউ আস্তে বলেছে । বলাটাই গুরুত্বপূর্ণ । ১৬ জুলাই আমি ময়মনসিংহের বাড়িতে ছিলাম ।
তখনো পর্যন্ত এর ভয়াবহতা জানতাম না । ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের মতো মনে হচ্ছিল । আমি যেহেতু একটি দলের সমর্থক, প্রতি আন্দোলনের সময় আমার বাড়ির কিছু না কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । এবারও আমার বাড়ির রেলিংগুলো কেটে নিয়ে গেছে । ১৬ জুলাই রাত থেকে বাংলাদেশের সব মানুষ মনে হয় না ঘুমাতে পেরেছে ।

শিল্পী হিসেবে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানানো, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলাটা কি কঠিন?
আমার জন্য বলা কঠিন ছিল না । আওয়ামী সরকারের আগ্রাসনটা আমি আগেই দেখে ফেলেছি, সুতরাং আমার আর কী খারাপ হবে! যা যা হওয়ার, হয়েছেই । কাজ হারানো, ব্ল্যাক লিস্টেড হওয়ার ভয় আমার ছিল না । অন্যরা যে ভয় পাচ্ছিল, তাঁদের ভয়টা উড়িয়ে দিচ্ছি না । আমার ভয়টা ছিল অন্য রকম । আমার বাসার লিভিং রুমে একটি বড় স্লাইডিং দরজা আছে । ছোট মেয়েটার বয়স দুই বছর । আমার ভয় হচ্ছিল, এদিকেও তো তৎকালীন সরকার হেলিকপ্টার পাঠাবে, গুলি ছুড়বে! দরজাটা আবার লক হয় না । সেটা মেরামতের জন্য লোক ডেকেও পাচ্ছিলাম না । এত আতঙ্কে ছিলাম, বাইরে গেলেও সারাক্ষণ সিসিটিভিতে খেয়াল রাখছিলাম, যাতে মেয়েটা বারান্দায় চলে না যায় । এই ভয়ের কথা বলে বোঝাতে পারব না ।

প্লেব্যাকে আপনাকে ইদানীং পাওয়াই যায় না!
গাইতে না দিলে কিভাবে পাবেন? একটা মানুষ যদি সারা বছর মাত্র দুটি গান করে, কিভাবে মনে করেন সে দুটি গানই শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাবে? সেটা তো সম্ভব না । আগে যেমন হতো, গানের ধরন অনুযায়ী শিল্পী বাছাই করা হতো । যেমন ‘আগে যদি জানতাম রে বন্ধু তুমি হইবা পর’ গানটি মমতাজের চেয়ে ভালো গাওয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয় । ওই আবেদন আমার মধ্যে নেই, আবার আমার যে গায়কি, সেটা উনাকে দিয়ে হবে না । গান অনুযায়ী শিল্পী বাছাইয়ের চর্চাটা হারিয়ে গেছে । আবার অনেকে হয়তো ভাবত, আমার নাম জড়িয়ে গেলে কী না কী ঝামেলায় পড়ে!

নতুন করে ক্যারিয়ার নিয়ে কী ভাবছেন?
কিছুই না, পুরনো যারা প্রযোজক ছিলেন, তারা ফিরবেন কি না, বিনিয়োগ করবেন কি না, সেটা এখন বড় প্রশ্ন । আমার অত টাকা নেই, ৮-১০ লাখ টাকা ব্যয় করে গান বানাব । যত দিন পর্যন্ত সংগীতাঙ্গনের পরিবেশ স্বাভাবিক না হবে, তত দিন আমার ফিরে আসাটা কঠিন ।

অনেক শিল্পী এখন নিজের ইউটিউব চ্যানেল থেকে গান প্রকাশ করছেন । এই দৌড়ে আপনি নেই…
পৃষ্ঠপোষক তো পেতে হবে । আমি তো মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে বলতে পারব না, আমার গানের স্পন্সর হন । ক্যারিয়ারে ১৮ বছর পার করে এটা বলতে পারি? এ কারণে নিজের চ্যানেল দাঁড় করাতে পারছি না । দেশে সাম্প্রতিক সময়ে কত বড় বড় আয়োজন হয়েছে, সিলন মিউজিক লাউঞ্জ, আইপিডিসি আমাদের গান কিংবা কোক স্টুডিও বাংলায় অনেকে গান করেছেন । কারো মনে কি প্রশ্ন এসেছে, এসব আয়োজনে আমাকে কেন দেখা যায়নি? ধরুন পুরো ক্যারিয়ারে আমি মাত্র পাঁচটা গান দিয়েছি । কিন্তু যাঁদের ক্যারিয়ারে কোনো মৌলিক গান নেই, তাঁরাও তো এসব অনুষ্ঠানে গান করেছেন । আমার কাছে তো ফোনই এলো না । জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের যে অনুষ্ঠান হয়, কই আমাকে তো ডাকেনি । ২০১১ সালের পর আর তো পুরস্কার পেলাম না । প্রায় প্রতিবছরই যৌথভাবে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে । এগুলোর দায়িত্বে কারা? আগে নিজেকে অনেক ছোট মনে হতো । কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে আমাকে সব জায়গায় যখন বয়কট করা হলো, তখন থেকে মনে হয়েছে আমি অত ছোটখাটো মানুষ না ।

বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থায় (জাসাস) যোগ দিয়েছিলেন, আবার সরেও এসেছিলেন । নতুন করে কিছু ভাবছেন?
আমার মা জাসাসের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন । সে সুবাদে দল থেকে ভালোবেসে আমাকে একটি দায়িত্ব দেওয়া হয় । কিন্তু মাস তিনেক পর আমার মনে হয়েছিল, ওই দায়িত্ব পালনের জন্য আমি প্রস্তুত নই । পদে থাকার জন্য যে সময় ও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, সেটা আমার ছিল না । গত দশ বছরে আমি অনেক পড়েছি, জেনেছি । তবে তখনো পদের প্রত্যাশী ছিলাম না, এখনো নই । আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেওয়ার ব্যাপারেও আর ভাবছি না । তবে বিএনপির সমর্থনে থাকব ।

গায়িকা ন্যান্সির কাছে বাংলাদেশের রাজনীতি আসলে কেমন?
বাংলাদেশে রাজনীতির সঠিক চর্চা নেই । রাজনীতি সবাই করে, এর বাইরে কেউ নেই । একজন খেটে খাওয়া মানুষেরও রাজনৈতিক দর্শন আছে । কিছু মানুষ নিজেদের নিরপেক্ষ বলে । কিন্তু নিরপেক্ষ বলতে কিছু আসলে নেই । ধর্ম-কর্ম সব কিছুতে পক্ষ আছে, রাজনীতি আছে ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com